কল্লোল লাহিড়ীর ইন্দুবালার ভাতের হোটেল পড়ার ইচ্ছে অনেক দিন ধরেই ছিল| ভেবেছিলাম হৈচৈ তে সিরিজ আসার আগেই পরে নেব, কিন্তু নানা কারণে তা পড়া হয়নি – অবশেষে দিদির থেকে ধার নিয়ে এক দিনেই পরে ফেললাম|
আসলে কিছু কিছু বই আছে যেগুলো পড়া হয়না |মনে হয় শব্দদের স্রোতে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাচ্ছি যেখানে লেখক নিয়ে যেতে চান| ঠিক প্রথম পাতা থেকেই পৌঁছে গেলাম কলাপোতা গ্রাম,সেখান থেকে ছেনু মিত্র লেনের দিকে যাত্রা করা বিধবা ইন্দুবালা মল্লিকের ভাতের হোটেলে|
ইন্দুবালার গল্প কিন্তু শুধু একা একটি মেয়ের লড়াইয়ে সফল হওয়ার গল্প না – গল্পের ভাজে ভাজে আছে বছরের পর বছর না পাওয়ার ইচ্ছেগুলোতে ধুলো জমা স্মৃতি; আছে সমাজের আর সংসারে কাছে হেরে যাওয়ার ব্যাথা| আছে মুক্তি যুদ্ধে শহীদ মনিরুল , আছে ভাষা যুদ্ধে শহীদ ভাই , আছে শ্রেণী যুদ্ধে শহীদ কমরেইড আলোক, আছে উচ্ছৃঙ্খলতার জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া মাস্টার রতন লাল মল্লিক|
এতো দূর পড়ে কি কপালে ভাঁজ পড়লো? ভাবছেন বই তা পড়বেন কিনা?
বইটা পড়তেই হবে| ইন্দুবালা মল্লিক হলো আশার প্রতীক| ঝোড়ো হওয়ার কাছে যেমন ছোট প্রদীপ প্রাণপণে চেষ্টা করে আলোর শিখা বাঁচিয়ে রাখার – ইন্দুবালা একটার পর একটা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে সেই ভাবেই| সাথে না থাকলেও অন্তরে জিয়ে রাখে মা-ঠাকুমার শিখানো রান্না, সংসার ধর্ম; কদর করে শাশুড়ির দূরদৃষ্টিটা; পদে পদে পায় লছমীর বন্ধুত্বর আলিঙ্গন ; ধনার মন ভালো করা যত্ন | ভাতের হোটেলে পালে পালে আসা আসে পাশের মেস বাড়ির কলেজ আর অফিস কেরানি দল নিয়ে সবসময় গমগম করতে থাকে ইন্দুবালার ভাতের হোটেলে| এপার বাংলা আর ওপর বাংলার রান্নার সাথে মিশে যায় আদরের সম্পর্কগুলো| দুই ছেলে আর মেয়েকে সাবলম্বী করার সার্থকতা ইন্দুকে দেয় ততটাই গর্ব যতটা তার তিলে তিলে তৈরী করা ভাতের হোটেল| ভাতের হোটেল হয়ে উঠে তার অবিচ্ছেদ্ধ পরিচয়|
দুই দেশ বিভঙ্গ এর উপরে উঠে এসে প্রতিকূলতা জয় করা যায় তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ ইন্দুবালার ভাতের হোটেল| অবশ্যি পড়বেন, নাহলে ইন্দুবালার হাতের সুস্বাদু রান্নার থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন!
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না – সরাসরি জানান Facebook বা Instagram