অনেক দিনের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সময়ের এভাবে বইটা পড়া হচ্ছিলো না। গরমের এক পড়ন্ত দুপুরে তুলে নিলাম মহাস্বেতা দেবীর “হাজার চুরাশির মা”। প্রথম পাতা থেকেই হৃদয় বিদীর্ণ করা কষ্টের স্রোতে বাসতাম লাগলাম। হয় তো সদ্য মা হয়েছি বলে আরো কষ্ট পাচ্ছিলাম এক একটা পাতা উল্টাতে।

নক্সালবাদী ছেলে ব্রতীর আকস্মিক মৃত্যু সুজাতাকে এনে দাঁড় করে অনেক প্রশ্নের সামনে । ব্রতীর আসলে কে ছিল – সে কি এমন করেছিল যে এক দিন শুধু “১০৮৪” হয়ে চিহ্নিত হতে হলো। সুজাতা নিজের পরিবারের অমানুষিক ব্যবহার মেনে নিতে পারেনি – নক্সালপন্থী বলেই কি সত্যিই একটা মানুষ খারাপ হয়? যে বাবা পরকীয়াতে জড়িয়ে দিনের পর দিন মায়ের উপর অত্যাচার করে সে কি তাহলে? যে মেয়ে নিজের মা কে ক্রমাগত হেয় করে চলে সে কি তাহলে? শুধু ব্রতী কি ভাবে দোষী হয়? নন্দিনীর থেকে জানতে পারে ব্রতী কতটা আবেগপূর্ণ ছিল। বন্ধুদের সতর্ক করে দিতে নিজের প্রাণ রক্ষা আর করতে না পারা ব্রতী কি শুধুই আদর্শবাদী তা তো নয় ।
গল্পের সূত্রধর সুজাতা বারেবারে খুঁজে ফেরে তার হারিয়ে যাওয়া ছেলের চিহ্ন, যত্ন করে সাজিয়ে রাখতে চাই সেই মধুর স্মৃতিগুলো, হাতড়ে বেড়ায় ব্রতীর কথা, ব্রতীর ফেলে যাওয়া ভালোবাসা। মায়ের কষ্টে যে ব্রতী চেয়েছিলো মানুষের মতন মানুষ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মা কে অন্য জায়গাতে নিয়ে যাবে।
ব্রতী নিজের জীবন প্রদীপ দিয়ে নিজের কাছের সবার জীবন আলোকিত করতে চেয়েছিলো, চেয়েছিলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে, জন্মভূমিকে রক্ষা করতে কিন্তু অচিরে প্রাণ হারাতে হলো। কাহিনীর মর্মান্তিকতা যেকোনো কারুর মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যাবে। ভাবতে বাধহয় করবে যে আজ কি এই মানসিকতা প্রাসঙ্গিক?
What do you think of this little piece? You can also reach me on Facebook or Instagram to share your views.










